ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন। নগর উত্তর বিএনপির গত তিন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তিনি। সভাবসূলভ ভঙ্গিতে অত্যন্ত কঠোর সমালোচক এবং জনপ্রিয় বক্তা হিসেবে নিজের অবস্থান ভালোই পোক্ত করেছেন। গত এক বছরে ভিন্নধারার একটি বক্তব্য কৌশল নিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করছেন সেগুন। সেই আলোকে এই আসনে সেগুন মানেই দ্বিগুন জনপ্রিয় সাধারন মানুষের কাছে।
ডাইসের অনেকেই মোস্তাফিজ সেগুনের বক্তব্য শোনার জন্য আগ্রহে থাকে। স্তুতিহীন বাস্তবধর্মী বক্তব্যের জন্য তিনি নগরের নেতাদের কাছেও সুপরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের ছাত্রনেতা এবার ঢাকা-১৮ আসনে থেকে নির্বাচনে লড়তে চান। ধানের শীষ প্রতীকে তার নির্বাচন করার পরিবেশ তৈরি হলে বৃহত্তর উত্তরার রাজনৈতিক চিত্র আরো বেশি উজ্জ্বল হতে পারে বলে স্থানীয় অনেকের মত।
মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের নির্বাচিত ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বিএনপির মুলধারার অধিকাংশ নেতৃত্ব সেই সময়ের বিদ্বায় অনেকের কাছেই তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সেই সময়ের ঢাবিকেন্দ্রীক ছাত্র রাজনীতির কারণে দলের হাইকমান্ডও সেগুনকে খুব ভালোভাবেই চেনেন এবং জানেন। দক্ষিণখানের মোল্লা বাড়ির এই কৃতি সন্তানের হাত ধরে এ অঞ্চলে ছাত্রদলের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়। বৃহত্তর উত্তরার ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে জাতীয়বাদী ধারার রাজনীতি শুরু হয় তার। পরে তিনি বিমানবন্দর থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। নগর বিএনপির কাইয়ুম-হাসান কমিটির সহ সভাপতি, আমান-আমিনুল কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সর্বশেষ আমিনুল-মোস্তফার কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় নেতাদের মতে, আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে সেগুনের ব্যপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পেশায় প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রেড জগতেও বেশ আলোকিত তিনি। সেগুনের নির্বাচনী রাজনীতির প্রথম হাতেখড়ি ঘটে উত্তরার মডেল ওয়ার্ড খ্যাত ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার সরকারের সময় সেগুন ১নং ওয়ার্ডে সর্বাধিক ভোটে জয় পেলেও তাকে পাস করতে দেয়নি নির্বাচন কমিশনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সেই নির্বাচনে শিক্ষিত স্বজ্জন সেগুনের জনপ্রিয়তায় টিকতে না পেরে একাধিক বার তার ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মতে, উত্তরা ১নং মডেল ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অধিকাংশ ভিআইপি। স্থানীয় বা জাতীয় কোনো নির্বাচনেই তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে চান না। কিন্তু সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে সেই ভিআইপি ভোটারা ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছেন এবং সেটা সেগুনের অন্যতম রাজনৈতিক স্বফলতা বলে মনে করা হয়। তারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে সেগুন যদি ধানের শীষের টিকেট পায় তাহলে মডেল টাউনসহ তার নিজ এলাকা জনবহুল দক্ষিণ খান, উত্তর খানে মোল্লা বংশের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সেই সুবিধাটা তিনি কাজে লাগাতে পারবেন। এর বাইরে খিলখেত এবং তুরাগের অধিকাংশ বাসিন্দারা সেগুনের আত্মীয়স্বজনসহ রাজনৈতিক কর্মীরা তারপক্ষে নির্বাচনী জোয়ার তুলতে সক্ষম হবেন। স্থানীয়রা বলছেন, এবারের ভোটের মাঠে ভালো চরিত্র, ক্লিন ইমেজ এবং ব্যক্তিগত যোগ্যতা নির্বাচন জয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই যোগ্যতার সবগুলোই মোস্তাফিজ সেগুনের মধ্যে রয়েছে। গত ১৮ বছরে বিএনপিতে যে ত্যাগ এবং নিজে স্ব-শরীরে রাজপথে থাকার যে ইতিহাস সেটা দিয়ে দলীয় আনুগত্য পরিক্ষায় অনেকের চাইতে সেরা তিনি।
নিজের মনোয়ন বিষয়ে বিএনপির মহানগর উত্তরের জনপ্রিয় নেতা মোস্তাফিজ সেগুন বলেন, পলিটিক্যাল ক্যানভাসারের মতো মাটি ঘাটির স্লোগান বা ব্যক্তিস্তুতির মানুষ আমি না। আমি শুধু বলতে চাই, ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই, আমার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি আমাকে তার প্রতিনিধি হিসেবে সিলেক্ট করেন এবং ধানের শীষের মার্কাটি আমাকে দেন তাহলে এ আসনটিই ধানের শীষের সবোচ্চ ভোটের আসন হবে। এর বাইরে অযথা কিছু বলার নেই আমার।
তবে মোস্তাফিজুর রহমানের সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচনী রাজনীতিতে সেগুনকে হয়তো সামনে আনবেন না দলের হাইকমান্ড। তবে সাংগঠনিকভাবে তাকে আরো উপযোক্ত জায়গায় কাজে লাগাতে পারে দল।